সেই পথের বাঁকে- শিশির আহাম্মেদ খান

 সেই পথের বাঁকে



                [ এক ]

ঋতু বাবা মার খুব আদরের মেয়ে ।অনেক সুখে যার বেড়ে ওঠা।ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্রী ।মোহাম্মদ পুর লালমাটিয়া কলেজে পড়ে।এত কিছুর পড়ে ও তার মনে ছিল শূন্যতা, হতাশা ।কারণ প্রায়সই তার বাবা, মা ঝগড়া করত ।একদিন এমনই এক ঝগড়া তার কাছ থেকে কেড়ে নিল মায়ের সুখ।তার মা আয়শা ওদের ছেড়ে চলে গেল।এই সব কারণে প্রায়স ই মন খারাপ থাকত ঋতুর ।এইবার পূজার ছুটি, তাই বন্ধু রা গাজীপুরে গুড়তে যাবে ।পুরো এক সপ্তাহের টুর ।কিন্তু ঋতু যেতে আগ্রহী না ।তার বাবা রাসেল আহমেদ একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন ।তাই সকাল -সন্ধ্যা শুধু ব্যস্ত থাকেন ।রাত 11 টা বাজে ,খাবার টেবিলে ঋতু বসে আছে ।বাবা জিজ্ঞাসা করল ,কি হল খাচ্ছো না কেন ? শরীর খারাপ ?
ঋতু - না এমনি ভালো লাগছে না।
বাবা - তোমার কলেজ থেকে আমাকে ফোন করেছিল ।তোমরা নাকি পিকনিকে যাচ্ছো ?
ঋতু - ওরা যাবে ।
বাবা -তুমি যাবে না ?
ঋতু - না
বাবা - কেন যাবে না ?
ঋতু - আমার ভাললাগছে না ।
বাবা -তুমি ও গুড়ে এসো তাদের সাথে , দেখবে মনটা ভালো লাগবে ।আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি আর কোন সমস্যা থাকলে বলো ঠিক আছে ?
ঋতু - আচ্ছা !
বাবা - মার সাথে কথা হয়েছিল ?
ঋতু - হু
বাবা - কি বলল ?
ঋতু - শুধু জিজ্ঞাসা করল কেমন আছি ?
বাবা - তুমি কি বললে ?
ঋতু - ফিরে আসতে বললাম ।
বাবা - আসবে বলেছে ?
ঋতু - কিছু বলেনি , শুধু কান্না করছে।
বাবা - এ গুলি সব অভিনয় , তোমাকে আমার কাছ থেকে দুরে রাখতে ।তুমি ওর ফোন রিসিভ করো না ।ও একটা প্রতারক ,আমি ওরে হাড়ে হাড়ে চিনি ।
ঋতু কিছু ই বলতে পাড়ল না ।নিরবে শুধু দু চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে গেল ......

পরদিন একটু দেরিতে ঘুম ভাংঙ্গল ঋতুর ।ঘড়িতে চেয়ে দেখে 11টা বাজে ,তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে কলেজের জন্য তৈরি হল ।টেবিলের উপরে টাকা রেখে গেল বাবা ।সেটা আলমারিতে তুলে কলেজের পথে ঋতু ।
কলেজে ঢোকতেই মনি দৌড়ে এল ।বলল , কিরে এত দেরি কেন ।আমরা কতক্ষণ ধরে তোর জন্য বসে আছি ।কালকে আঁখি কাক্কুকে ফোন করে ছিল ।তিনি রাজি হয়েছে ।
ঋতু - আমি জানি ,আব্বু বলেছে ।তবে আমার ইচ্ছে করছে না ।
মনি - দেখ মনের প্রশান্তি খুঁজতে হলে তোকে গ্রামে ফিরে যেতে হবে ।যেখানে যান্ত্রিক কোলাহল নেই।যেখানে পাখিদের গুঞ্জন, নদীর কল্লোল , ফ্রেশ বাতাস ,মাথার উপরে বিশাল আকাশ, সব কিছু মন ছুঁয়ে যায় ।এ যেন সাক্ষাৎ জান্নাত ।
ঋতু - বাহ তুই দেখি দার্শনিক হয়ে গেলি !
মনি - এই টুকু বুঝতে দার্শনিক হতে , হয় না ।তাছাড়া আমার নানা বাড়ি , দাদা বাড়ি গ্রামে ।তাই ছোট থেকেই গ্রামের সব কিছু আমার খুব পরিচিত ।

Comments

Popular posts from this blog

অজেয় তারুণ্য / শিশির আহাম্মেদ খান

রক্ত গঙ্গা / শিশির আহাম্মেদ খান

White - Shishir Ahmed Khan