রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা (3)- শিশির আহাম্মেদ খান

 জুয়েল :- ভাই কি হল, ঘুমিয়ে গেলেন নাকি  ?

রাতুল :- কে কে  ? অহ তুমি  !
জুয়েল  :- ভাই চলেন কিছু খেয়ে নেই ।
রাতুল :- খাব কোথায়  ? কোন হোটেল খোলা নেই,  একটা চায়ের টং দোকান ও খোলা নেই।
জুয়েল  :- সে সব চিন্তা করতে হবে না । সব ম্যানেজ হয়ে যাবে । ওয়েড করেন।
একটা গলি পথে গাড়ি ঢুকিয়ে ১০ তলা একটা বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি থামল আর অমনি আলীবাবার চল্লিশ চোরের গল্পের মতন পাহাড়ের চিচিং ফাঁক এর মতন গেইট খুলে গেল।
পার্কিং এ গাড়ি রেখে লিফট এ উঠল জুয়েল পিছন পিছন আমিও উঠে পড়লাম। লিফটে  উঠলে আমার ভূমিকম্পের কথা মনে পড়ে যায় । তবে এই সব নিয়ে চিন্তা করার এখন সময় নাই। কারণ এখন মাথার মধ্যে এই হোটেলে খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন গোড়পাক খাচ্ছে। জুয়েল ভিতরে ঢুকে গেল ,তার পিছন পিছন আমিও ঢুকে পড়লাম। একি !

এই মহামারী করোনার মধ্যে ,তার উপর  লকডাউন  এত এত মানুষ বাসা রেখে রেস্টুরেন্ট এ কেন খেতে আসে  ? নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করছি  ! কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না । তবে খেতে খেতে বুঝতে পারলাম বেশিরভাগ পরিবারে লকডাউন চলছে। তাই রান্না বান্না বন্ধ। মূল কারণ অনুমান করছি লকডাউন এ  সবাই ঘরে থাকায় ঝগড়া লেগে যায় খুব সহজে । তার সূত্র ধরে সংসার গুলোতে চলে লকডাউন।

পরিবারের সরকার হল বউ । সেই সরকারের সাথে মতের মিল না হলে একটা গন্ডগোল লেগে যায়। গন্ডগোলে বন্ধ করে দেওয়া হয় রান্না-বান্না কার্যক্রম। সরকার সেচ্ছায় অনশন করে বসে ,আবার কেউ শুরু করে বাবার বাড়ি উদ্দেশ্যে রোড মার্চ । মানুষের জীবন বিচিত্র এক পান্ডুলিপি । সেই পান্ডুলিপির পরতে পরতে কত হাজারো দুঃখ ছাপ রেখে যায়  !

# জীবনের মাঝ বয়সে এসে ভালোই কাটছে আমার একাকীত্ব সময় । কোন জবাবদিহিতা নেই , নেই কোন উটকো ঝামেলা সমৃদ্ধ প্রেমিকা। এই আছি , বেশ আছি ! সূত্র টা আমার খুব পছন্দ । তবে আমার জীবনের পান্ডুলিপির গল্প টা আমি একটু ভিন্ন ভাবে রচনা করে যেতে চাই। জুয়েল আর আমি খাওয়া শেষ করে গাড়িতে চললাম ।
জুয়েল  :- ভাই ! পাটি অফিসে যাব,  নেতা ডাকছে । যাবেন নাকি  ?
রাতুল :- আজ না , আজ আমার জরুরি কাজ আছে । আমাকে কাকরাইল মোড়ে নামিয়ে দাও । জুয়েল :- ঠিক আছে ভাই। ভাই আপনার মোবাইল নাম্বার দেন,  মাঝে মাঝে আপনার সাথে কথা হবে ।
রাতুল :-  আমি ফোন ব্যবহার করি না ।
জুয়েল  :- তা হলে কি করে যোগাযোগ করব আপনার সাথে ?
রাতুল :- যোগাযোগের যখন সময় হবে তখন আল্লাহ তোমার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবেন।
জুয়েল  :- সেটা কি সম্ভব  ?
রাতুল :- কেন সম্ভব নয়  ? সমস্ত সৃষ্টির জম্ম মৃত্যু যার হাতে । যার ইশারায় চলছে মহা বিশ্ব , তার প্রতি আমার বিশ্বাস আছে ।
জুয়েল  :-  ঠিক আছে ভাই  , আমার কার্ড  রাখেন । কখনও কোন দরকার হলে নকট দিয়েন ।
রাতুল :- আচ্ছা  !
জুয়েল  :- ভাই খোদা হাফেজ।
রাতুল  :- আল্লাহ হাফেজ।

কাকরাইল মোড় থেকে হাটছি , উদ্দেশ্য মতিঝিল যাব । নয়াপল্টন  আসতেই দুই দিক থেকে পুলিশ গিড়ে ধরল । একের পর এক প্রশ্ন বানে অস্থির।  পকেট তল্লাশি করে পাঁচ টাকার কয়েন আর একটা ভিজিটিং কার্ড পেল। অফিসার কার্ড টা কয়ে’ক বার পড়ল , মনে হচ্ছিল কার্ড টার  লেখা দুর্বোধ্য  ভাষায় লিখা তাই সে পড়তে পারছিল না ।
অফিসার  :- নাম কি  ?
রাতুল  :- জুয়েল !
অফিসার  :- ঐ বেটা আমার লগে মশকরা করছ  ? আমি জুয়েল নেতারে চিনি না । তোর নাম বল , তুই কি কাজ করছ ? তুই থাকিস কোথায়  ? তুই শিবিরের কোন স্তরের নেতা  ? তোর বোমা তৈরির  কারখানা কঐ  ?
রাতুল :- আমি কোন রাজনীতি করি না । আমার নিদিষ্ট কোন ঠিকানা নাই।  তাই কোথায় থাকি নিদিষ্ট করে বলতে পারছি না ...
অফিসার  :- মশকরা করছ , থানায় নিয়া  ডলা দিলে সব বারইয়া যাইব । তাড়াতাড়ি ক তুই  থাকিস কই  ?
রাতুল  :- আরে ভাই  আমি ত বলছি , আমার নিদিষ্ট কোন  ঠিকানা নাই।  যেমন দরুন আপনি যদি এখন আমাকে ধরে থানায় নিয়ে ডলা  দিলে, তখন আমার ঠিকানা থানা ।

পাশ থেকে কনস্টেবল বলল স্যার স্যার এই হালায় মনে হয় অনেক বড় মাপের ক্রিমিনাল।
অফিসার  :- তেমন মনে হচ্ছে না ।
রাতুল  :- কনস্টেবল শিক্ষা কম জ্ঞানের পরিধি কম । এই কথা শুনে অফিসার একটা গোপন হাসি দিল , সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল - তোমার আসল পরিচয় দাও আমি ছেড়ে দিব ।
রাতুল  :- আমার নকল কোন পরিচয় নেই,  আমি রাতুল আহাম্মেদ,  ঢাকা পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখন বেকার ও ভবঘুরে সময় কাটাইতেছি।
অফিসার  :- তা বুঝলাম,  কিন্তু জুয়েল নেতার সাথে আপনার সম্পর্ক কি  ?   
রাতুল  :- জুয়েল আমার ছোট ভাই....
অফিসার  :- বলেন কি ! ভাই আগে বলবেন না  ! তাহলে এত সময় আপনাকে বিরক্ত করতাম ।
রাতুল :- সেটা বলার সময় পাইলাম কই.... কথা শেষ করার আগেই কনস্টেবল দেখি কোকাকোলা হাতে দাঁড়িয়ে।  মনে হচ্ছে কোন বড় কর্তা আমি ।
অফিসার  :- ভাই একটু ঠান্ডা খান, অনেক ক্ষণ আপনা কে বিরক্ত করেছি । আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।  জুয়েল ভাই কে দয়া করে কিছু বলবেন না  প্লিজ। 

এই দিকে কনস্টেবল এর হাত পা কাঁপছে , দেখে মনে হচ্ছিল ওর হাইপোথানিয়া হয়ছে । মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময় বা পরিমাণ পর্যন্ত ঠান্ডা সহ্য করতে পারে । তারপর সে হাইপোথানিয়ায় আক্রান্ত হয় আর এই অবস্থার মধ্যে যদি বেশি সময় ধরে থাকে তবে তার জীবন হানির সম্ভাবনা থাকে বেশি ।

রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা !

রাতুল :- আমি এখন ঠান্ডা খাব না । আমার একটু তাড়া আছে ।
অফিসার :- তাহলে ভাই অন্য কিছু একটা খেতে হবে ভাই।  আপনি না করবেন না প্লিজ।
রাতুল :- ঠিক আছে , এক কাপ রং চা হলেই হবে ।
অফিসার ভেনসন সিগারেট এর একটা প্যাকেট হাতে দিল  । বলল , ভাই আপনার জন্য  ।
রাতুল :-   কিন্তু আমি কখনোই সিগারেট খাই না । এক মাত্র চা চলে প্রতি দিন ।
অফিসার   :- তাহলে বিরিয়ানী আনতে বলি ।
রাতুল  :- তার দরকার হবে না , যদি পারেন আমাকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে উপকার হবে ।
অফিসার  :- কিন্তু রেল চলাচল বন্ধ আছে ।

তাতে ও কোন সমস্যা নাই,  আমি রেল লাইন দিয়ে এ হেটে চলে যাব।
অফিসার  :-  কি বলেন ভাই,  আমি পুলিশের গাড়ি দিয়ে দিচ্ছি , আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে ।
রাতুল  :- তার কোন দরকার হবে না , আমি হাটতে পছন্দ করি । তা ছাড়া আমি চাই হেটে বিশ্ব রেকর্ড করব।
অফিসার  :- বলেন কি ভাই,  ক্রিয়েটিভ আইডিয়া আপনার।  আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
রাতুল   :- ঠিক আছে , বিদায় নিলাম। 

Comments

Popular posts from this blog

অজেয় তারুণ্য / শিশির আহাম্মেদ খান

রক্ত গঙ্গা / শিশির আহাম্মেদ খান

White - Shishir Ahmed Khan