আমাদের একজন প্রিন্স মাহমুদ আছে -শিশির আহাম্মেদ খান

 আমাদের একজন প্রিন্স মাহমুদ আছে

এই মানুষটার কাছে আমাদের বহু ঋণ, যারা বাংলা গান তথা বাংলাদেশের ব্যান্ডের গান শোনেন তাদের কাছে প্রিন্স মাহমুদ নামটি অনেক পরিচিত। তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে একই সুতোয় বেঁধেছেন। নব্বইয়ের দশককে বলা হয় ব্যান্ড সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ। সেই যুগকে যারা অসংখ্য মণি-মুক্তায় সমৃদ্ধ করেছেন অর্থাৎ যাদের হাত ধরে সেই যুগের পথচলা প্রিন্স মাহমুদ তার সারথি। সব্যসাচী এই সঙ্গীতজ্ঞ তার জাদুকরি কথা, সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় দিয়েছেন অজস্র শ্রোতাপ্রিয় গান।

শৈশব থেকেই দেখে আসছি ঈদ,পূজা,পহেলা বৈশাখের মতো সার্বজনীন উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে অডিও গানের প্লাবন আসতো। গুরু আজম খান, নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসান, শাফিন আহমেদ, পার্থ বড়ুয়া, টিপু, মিজান, বাপ্পা মজুমদার, খালিদ, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল তথা একঝাঁক ব্যান্ড তারকার মিক্সড ও সলো এলবাম। আসলে এগুলো ঠিক এলবাম নয়_ বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের অমূল্য সব নিদর্শন।

সেসময় আমরা ছোটরা দেখতাম ব্যান্ড তারকাদের একক কিংবা যৌথ এলবামগুলোর জন্য আমাদের অগ্রজরা একপ্রকার মুখিয়ে থাকতো। কার এলবাম আসছে, কবে এলবাম রিলিজ পাচ্ছে, বাজারে কবে আসছে সেসব তথ্য দৈনিক পত্রিকা কিংবা ক্যাসেটের দোকানির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতাম।

আমাদের গল্প হতো সেসব এলবাম নিয়ে, কেমন হতে পারে গানগুলো, এই এলবামে কে গান লিখছে, কার সুর, কার কম্পোজিশন। বেশিরভাগ সময়ই দেখতাম সেসব গানের নেপথ্যের মানুষটার নাম প্রিন্স মাহমুদ। অর্থাৎ তখন বাজারে প্রিন্স মাহমুদের কথা সুর ও কম্পোজিশনে অনেক এলবাম আসতো।কয়েকদিনের মধ্যেই মানুষের মুখে মুখে চলে যেতো একেকটা গান। এরকম কত কালজয়ী গান ও এলবামের সৃষ্টি করেছেন এ মানুষটা, তার ইয়ত্তা নেই।

আমাদের বর্তমান প্রজন্মও বেশ গানপাগল। তারাও নব্বই দশকের গান শুনছে, গাইছে তবে অনেকেই সেসব গানের নেপথ্যের মানুষগুলোর সাথে পরিচিত না। হয়তো শুধু শিল্পীর নামটাই জানছে বা অনেকে তা-ও জানেনা। এইযে বাবা দিবসে জেমসের গাওয়া "বাবা" গানটার কিছু অংশ লিখে বাবার সাথে ছবি আপলোড করছেন এই গানটার কারিগর প্রিন্স মাহমুদ, মা দিবসে "মা" গানটার কিছু অংশ লিখে প্রিয় মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করছেন সেই" মা "গানটাও প্রিন্স মাহমুদের, জেমসের গাওয়া "বাংলাদেশ " গানটা শুনেছেন তো? ঐযে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাজানো হয়, হ্যা_এই 'বাংলাদেশ' গানটাও প্রিন্স মাহমুদের। বন্ধুকে আমরা কে না ভালোবাসি,প্রতিবছর বন্ধু দিবসে বন্ধুদের প্রতি আমার-আপনার অনুভূতিগুলো যে গানের মাধ্যমে প্রকাশ করি ; হ্যা পার্থ বড়ুয়ার গাওয়া

' ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ ' গানটাও প্রিন্স মাহমুদের করা। আসলে এরকম অসংখ্য গানের স্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদ। যেগুলো আজকাল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ

দিবসের থিমসং বনে গেছে।

" শক্তি, পিয়ানো, যন্ত্রণা, বাজনা, ব্যবধান, হারজিৎ, অভিমানী, দেয়াল, দেনাপাওনা, দহন, দেবী, দাগ থেকে যায়, ছুটি, ক্ষমা, চিঠি, ঘৃণা, মেহেদী রাঙা হাত, এখনও দু'চোখে বন্যা, দেশে ভালোবাসা নাই, শেষ দেখা, জগৎবাড়ি, স্রোতসহ অসংখ্য মিক্সড এলবাম মানুষের মনে এখনও বিশেষ দাগ কেটে আছে।

আসলে প্রিন্স মাহমুদকে পরিচয় করিয়ে দেবার মতো কিছু নেই। আমার মতো অধম প্রিন্স মাহমুদকে নিয়ে লেখার যোগ্যতাও রাখিনা, প্রিন্স মাহমুদ নিজেই একটা

মহীরুহ, একটা অধ্যায়। তবে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে এই অধ্যায়গুলোর সাথে ঠিকমতো পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। কেননা কালজয়ীসব অধ্যায়ের সাথে পরিচিত না হলে তাদের ভিত মজবুত হবেনা, মেরুদণ্ড পাকা হবেনা।

Comments

Popular posts from this blog

অজেয় তারুণ্য / শিশির আহাম্মেদ খান

রক্ত গঙ্গা / শিশির আহাম্মেদ খান

White - Shishir Ahmed Khan