লকডাউন ভালবাসা - শিশির আহাম্মেদ খান

 লকডাউন ভালবাসা

শিশির আহাম্মেদ খান

লকডাউন এর কারণে সব বন্ধ, আকাশ হোম সার্ভিস ডেলিভারির কাজ করে।
করোনাভাইরাস কারণে ইদানিং এ কাজের খুব চাহিদা।কিন্তু অনেক ঝুকি পূর্ণ , না করে উপায় কি  ? সংসার চালাতে টাকার প্রয়োজন, আর সেই টাকা কামাতে হলে ঝুঁকি নিতেই হবে !
প্রতিদিন কল আসে কোন না কোন যায়গা থেকে ।
রোজকার কাজ গুলো অনেকটা যুদ্ধে পরিনত হয়েছে। কিন্তু আজ কোন অর্ডার আসেনি, তাই বসে বসে Facebook চালাচ্ছে আকাশ অলস সময় । একটা SMS আসল ,আমাকে এই নাম্বার এ ৮৯ টাকা ফ্রেক্সিলোডদেন। আর বাসায় এসে টাকা নিয়ে যান .....
আর কিছুই লিখে নাই । অনেকটা অবাক হয়ে হাসলাম। SMS  রিপ্লাই করলাম আপনার ঠিকানা plz.......

সারাদিন এর শূন্য ইনকাম এর পর অপরিচিত নাম্বারে ৭৯ টাকা পাঠিয়ে ভাবছিলাম বাসায় ফিরব, অমনি SMS এল সেই নাম্বার এ।
এক প্যাকেট মার্ক্স  আর এক প্যাকেট চিপস নিয়ে আসতে । এই ভার ঠিকানা দিয়ে দিল ।
ঝটপট অর্ডার গুলো নিয়ে ছুটলাম। দশ মিনিটে বাসার সামনে পৌঁছলাম, নকট/ কলিং বেল চাপতেই একজন ভদ্রলোক দরজা খুলল আর আমার কাছ থেকে অর্ডার গ্রহণ করে বিল পেইড করে বিদায় করল।ওখান থেকে কিছু দুর আসার পরে আবার ও SMS এল ঐ নাম্বারে ,তবে কোন কিছু অর্ডার না ,Thinks জানানোর জন্য। আমি বিষয়টা তেমন গুরুত্ব দিলাম না।

আবার সেই একই নাম্বারে SMS এল ,নতুন অর্ডার করল ,সাথে নিজের নামটা ও লিখল, ইতি .....।
বাসার কাছে আসতেই দেখি এটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ।
আকাশ :- অপূর্ব  , এত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নাই। কিছুক্ষণ আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
ইতি :- রিএক্ট
আকাশ :- অর্ডার ছিল.....
ইতি :- মাথা নেড়ে সায় দিল।
আকাশ  :- পণ্য গুলো তার হাতে বুঝিয়ে দিল আর বিল নিয়ে আসার সময় পিছন ফিরে কয়ে’ক বার তাকাল ।

রাতে SMS  এ কথোপকথন হল দুজনের মাঝে  ।
আকাশ বলল আপনি দেখতে অনেক সুন্দর  !
ইতি       :-  মিথ্যা কথা  । আমি মোটেও সুন্দর নই।
আকাশ  :- আপনি দেখতে যেমন সুন্দর আপনার কথা না জানি কত সুন্দর...
ইতি    :- একজন মানুষের সব কিছু সুন্দর থাকতে হবে  ?

আকাশ  :- আপনি রেগে গেলেন বুঝি ?
ইতি       :- আমি কখনো রাগি না ।
আকাশ  :- কিন্তু আমি অল্পতেই রেগে যাই !
ইতি        :- ভালো মানুষ গুলোর রাগ একটু বেশিই থাকে ,কিন্তু ভেতরটা শিমুল তুলার মতন নরম ।অ
আকাশ  :- আপনি কি করে বুঝলেন  ভালো মানুষের রাগ বেশি ?
ইতি     :- আমার আব্বু কে দেখে  ।
আকাশ  :- ও ,কালকে কোন কিছু অর্ডার আছে  ?
ইতি     :- আপনি সব জায়গাতে বিজনেস খুঁজেন কেন  ?  কই  একটু রোমান্টিক কথা বলব ।
আকাশ  :- পেটে খাবার না থাকলে বুম ফুটালেও রোমান্টিক কথা আসে না ।
ইতি    :- হাসাইলেন, তবে আপনি চাইলে আপনার পেটে খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে পারি ।
আকাশ :- সেই টা কি ভাবে  ?
ইতি    :- খুবই সহজ ,কালকে আপনি আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলে ।
আকাশ  :- কিন্তু আমি আপনাদের বাসায় বেড়াতে আসব কেন  ?
ইতি   :- না আসলে ,কালকের অর্ডার পৌছাবে        কে  ?
আকাশ  :- কালকেও অর্ডার আছে  ?
ইতি     :- হু
আকাশ  :- তাহলে ভালোই হয় , এক ডিলে দুই পাখি ।
ইতি      :-  অর্ডার লিখে দিচ্ছি ,কাল কিন্তু দুপুরে আসবেন। ভালো থাকবেন।
আকাশ আপনিও ভালো থাকবেন।

বাসার সামনে ইতি পায় চারি করছে , আকাশ আসল অর্ডার কৃত পণ নিয়ে ।
ইতি  :- লাজুক হাসির রিএক্ট।
আকাশ  :-  আমি কি দেরি করে ফেললাম  ?
ইতি      :-  মাথা নেড়ে না সূচক সম্মতি । আকাশ কে ইশারা দিল ঘরে প্রবেশের জন্য ।

খাবার টেবিলে দুই জনের চোখা চোখি  ।
ইতি  :-  খাবার দিয়ে যাচ্ছে ।
আকাশ  :- তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে ।
          
               [কল্পনার জগতে আকাশ  ]
গরম ভাত আকাশের হাতের উপর পড়তেই হু  ওওওও বলে চিৎকার দিল।

আকাশ কল্পনা করছে  ইতি কে বিয়ে করে সুখের সংসারে করছে । দুই জন খাবার টেবিলে বসে আছে ।
ইতি   :- ও ভাবে কি দেখছো  ?
আকাশ  :- তোমাকে  ?
ইতি    :-  (হাসি দিয়ে ) আমাকে এ ভাবে দেখার কি  আছে  ?  আমাকে নতুন দেখছো  নাকি  ?
আকাশ  :- তোমাকে যতই দেখি নতুন লাগে , চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না । মনে হয় হাজার বছর ধরে তোমাকে দেখার তৃষ্ণা নিয়ে দেখছি আমি ।
ইতি   :- তোমার এই সব পাগলামির মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না ।
আকাশ  :- তোমার বুঝতে হবে না  !
ইতি    :- সেইটাই দেখছি ,শেষ পর্যন্ত একটা পাগলের সাথে সংসার করতে হবে ।
আকাশ  :-  হু ........

আকাশ আজ মহা খুশি জীবনের এক মাত্র উল্লাস।
মন গহীনে চেনা মিউজিক বেজে উঠছে ।
প্রাকৃতিক দৃশ্যায়নে আকাশের ছুটা ছুটি ।

আকাশ বিছানায় শুয়ে আছে ,মোবাইল স্কিনে ইতির নাম্বার টার দিকে তাকিয়ে আছে ।
ইতি  :- ?
আকাশ  :-  কেমন আছো  ?
ইতি  :-  ভালো , তুমি কেমন আছ  ?
আকাশ :- তোমার মাঝে হারিয়ে গেছি !
ইতি :- হারালে বিপদ , বড় একা হয়ে যাব ।
আকাশ  :- তোমাকে একা থাকতে দিচ্ছে কে  ? তোমাকে সারাটা জীবন এই বুকের মধ্যে ভালবাসার সুতোতে বেধে রাখব।
ইতি :- সত্যিই বলছো  ?
আকাশ:- সত্যিই ! সত্যিই ! সত্যিই ! এই ভার বিশ্বাস হয়েছে ত ।
ইতি :- আমি ' ত  সেই প্রথম দেখাতেই তোমাকে বিশ্বাস করে ফেলেছি । কিন্তু ভয় হয় ,তুমি যদি সব কিছু জানার পরে হারিয়ে যাও !
আকাশ :-  আমার কিচ্ছু জানতে হবে না ।আমি শুধু জানি তোমাকে আমি ভালোবাসি । আমার জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া তুমি !
ইতি  :- কিন্তু একটা কথা .....
আকাশ  :- কোন কথার প্রয়োজন নেই ।
ইতি  :- সত্যিই  বলছো  ?
আকাশ  :-  তুমি বিশ্বাস কর না  ?
ইতি   :- কেন বিশ্বাস করব না । তবুও  ভাবি তোমার যদি কষ্ট হয় !
আকাশ:- আচ্ছা ! কাল কি আমাদের দেখা হবে  ? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ।

ইতি :- দেখা হতে পারে ,তবে একটা শর্তে 
আকাশ  :- কি শর্ত 
ইতি  :- তুমি বলবে আমি শুনব , কোন প্রশ্ন করতে পারবে না ।
আকাশ  :- ঠিক আছে ।

পার্কে  হাটতে হাটতে  একটা জায়গায় গিয়ে বসল দু জনে ।আকাশ :- তোমাকে ছাড়া আমার একটা মুহুর্ত থাকতে পারি না । সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবি , ঘুমের গোড়ে তোমাকে স্বপ্নে দেখি ।

ইতি  :-( মুচকি হাসি দিবে  )
আকাশ  :-  তোমার সাথে কথা না বলতে পারলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে । আমি চাই খুব তাড়াতাড়ি  তোমাকে বিয়ে করতে ।
(ছানাভরা চোখে উঠে চলে গেল ,আকাশ হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে ।)

ইতি দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে ,তার  অনেক  কান্না পাচ্ছে । কিন্তু কাঁদতে পারছে না ।
বুকের ভিতর যেন মহা সাইক্লোন বয়ে যাচ্ছে ।
ইতি :- না সত্যিই কথা গুলো আকাশ কে বলা উচিত । তা না হলে ও সারা জীবন আমাকে প্রতারক ভাববে । সত্যি টা ওকে জানাতে হবে ।আমি ওকে সব বলব , আমার অক্ষমতা আমি ওকে বলব .....

আকাশ ফোন দিল ইতিকে , ফোন রিসিভ করল না । আবার ফোন দিল, এই বার রিসিভ করল ।

আকাশ  :-  হ্যালো, হ্যালো, কথা বল plz  ।
ওপাশ থেকে হু হু  করে কান্নার শব্দ ভেসে এল ।
আকাশ  :- ঠিক আছে আমি তোমাকে  আর কোন দিন কিচ্ছু জি’জ্ঞেস করব না । তুমি যা চাও তাই হবে  ।
(ফোন টা কেটে গেল )
কয়েক সেকেন্ড পরে একটা SMS এল ,কাল দেখা কর  .....

পার্কে  দু ,জনে বসে আছে । কেউ কিছু বলছে না ।
আকাশ :- কিছু বলছো না কেন ? কি কথা বলতে ডেকেছ, বল।
ইতি :-( তার বাকপ্রতিবন্ধির ) সে ইশারায় আকাশ জানাল ,সে কথা বলতে পারে না । আর কোন দিন কথা বলতে ও পারবে না ।
আকাশ  :- কয়েক মুহূর্ত  স্তব্ধ, বিমর্ষ হয়ে গেল  । দু হাতে মাথা চেপে ধরল ।
ইতি  :-  কাঁদছে
আকাশ  :- উঠে চলে যাচ্ছে , ইতির দিকে ফিরে ও তাকল না ।
ইতি :- মুষড়ে পড়ে কাঁদছে  .....

তার সাথে প্রকৃতিও যেন শোকে বিমূর্ত।
আকাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়া ইতি কে হাত ধরে টেনে তুলে, বুকে জড়িয়ে ধরল । দুই জনই কাঁদছে ,বুক ফাঁটা কান্না । তবে এই কান্না সুখের, এই কান্না বন্ধনের। হাত ধরে ওরা হাটছে আগামীর পানে ....


                     সমাপ্ত 

Comments

Popular posts from this blog

অজেয় তারুণ্য / শিশির আহাম্মেদ খান

রক্ত গঙ্গা / শিশির আহাম্মেদ খান

White - Shishir Ahmed Khan