মেঘ বালিকা (পর্ব 2)- শিশির আহাম্মেদ খান

 

মেঘ বালিকা (পর্ব 2)- শিশির আহাম্মেদ খান 

ইমন দুপুরে স্কুল থেকে এসে বই খাতা ছুড়ে ফেলে সে ঐ চারা গাছটার কাছে গেল । ওমা গাছটা এত অল্প সময়ে এত লম্বা হল কি করে । এত দেখছি আমার মাথার উপরে উঠে গেছে। মনে হচ্ছে লতানো কোন গাছ । মনে হচ্ছে এক টুকরু মেঘ সব সময় ছায়া দিয়ে রাখছে প্রতি মূহুরতে গাছটা লম্বা হতে লাগল। ইমন চিনতে পারল এই গাছটার পরিচয় ।এটা একটা সিম গাছ । সে একটা কঞ্চি কুপে( গেড়ে) দিয়ে লতাটা কঞ্চিতে পেচিয়ে দিল।


এক দিন যায় , দুই দিন যায় এমনি করে গাছটা বড় হতে লাগল । এক সময় মাস চলে গেল । কিন্তু গাছটিতে কোন ফুল ধরল না। প্রতিদিন অপেক্ষায় বসে থাকে ইমন , যেন আজ গাছটায় কোন ফুল দেখবে । কিন্তু কোন ফুল ফুটে না সেখানে ! লতাটা
মনে হল আকাশে উঠে গেছে। এক দিন সকালে ইমন লতা বেয়ে উঠতে লাগল ।

মনে হয় আর একটু উঠলেই লতাটার শেষ মাথা পাওয়া যাবে । কিন্তু শেষ মাথা আর শেষ হয় না। বেলা গড়িয়ে এলো পূর্ব আকাশে সূর্য উঠল, সে আরো উপরে উঠল । এখন অনেক উপরে উঠে গেছে সে। ক্লান্ত হয়ে গেল ইমন ,তাই সে ভাবল একটু জিরিয়ে নেই । তাই হল করল সে , সিম পাতার ছায়ায় বসে লতায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল । লতা আরো অনেক উপরে উঠে গেল। সে যখন ঘুম থেকে জাগল তখন বিকেল প্রায় .........

সে ভাবল এত উপরে উঠলাম এখন নেমে যাবো ,তা কি করে হয় । আবার উঠতে লাগল। সন্ধ্যা হয়ে এলো তবু সে উপরে উঠছে ।আকাশ ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে।ইমন উঠছে তো উঠছে, এই দিকে রাত শেষ হয়ে এলো । ঐ ভেসে আসছে মেঘ রাজ্যের মেঘে দের কোলাহল। ইমন ভাবল না আর পারছি না। এভাবে সকাল হবার পর বাকি টুকু উঠব। এই বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের গোরে স্বপ্ন দেখল, সে মেঘের কুরসিতে বসে আছে আর আশেপাশে কত শত দাস-দাসি তার সেবায় নিয়োজিত।

সূর্যের এক ফালি রোদ চোখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। ও মা সকাল হল বুঝি । আবার উপরে উঠতে লাগল , এ ভার যতই উপরে উঠছে ততই ধোঁয়ার মতন কি সব উড়ে যাচ্ছে চারি পাশে । নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে চলছে । শীতল বাতাসের ছোঁয়ায় প্রাণ জুড়ীয়ে যাচ্ছে । ইমন এই বার গাছটার একেবারে শেষ প্রান্তে উঠে এল ।একি গাছটায় নীল রং এর দুইটা ফুল ফুটে আছে। হাত দিয়ে ইমন ফুল দুইটি স্পর্শ করতেই বিশাল এক টুকরু মেঘের ভেলা।

তার উপর সোনার পালংকে হেলান দিয়ে বসে আছে মেঘ রাজ্যের রাজকুমারী। দেখতে কতই না সুন্দর, মায়া ভরা হরিণী চোখ আর মাথায় দিঘল কালো চুল খোপা করে রেখেছে। তাতে একটা শিউলি ফুলের মালা গোজে রেখেছে। ইমন মালা টা দেখে চিনে ফেলল । সে বলল , আরে এত সেদিনের মালা ! যা আমি গেঁথে পুকুর ঘাটে ফেলে গিয়েছিলাম। এত দিনে এ মালাটা শুকিয়ে যায় নি ! এ টা কি ভাবে সম্ভব .......

মেঘ বালিকা :- আসুন রাজকুমার । আপনাকে মেঘ রাজ্যে স্বাগতম ! আপনার এই শিউলি মালা ভালবেসে খোপায় জড়িয়ে রেখেছি।
ইমন :- তোমার কাছে যে মালা আছে , তা এত দিনে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা ?
মেঘ বালিকা :- কুমার এটা আপনাদের পৃথিবী নয় যে নষ্ট হয়ে যাবে । এখনে সবকিছুই সতেজ আর এখানকার বাতাস সুশীতল যা প্রাণ জুড়িয়ে যায় ।

ইমন :- তুমি সারাদিন কি কর ?
মেঘ বালিকা :- আমি সারাদিন গান করে বেড়াই আর যখন যেথায় ইচ্ছে উড়ে যাই। ইচ্ছে হলে ফুলের বনে বৃষ্টি ঝড়াই , কখনও আবার রোদের সাথে লুকোচুরি খেলি। কিন্তু আমি এখন থেকে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াব।

ইমন :- আমাকে নিয়ে কেনো ?
মেঘ বালিকা :- কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি।
ইমন :- আমিও তোমাকে ভালবাসি । কিন্তু এখন আমার অনেক ক্ষুধা ! তুমি কি আমাকে কিছু খেতে দিবে ?
মেঘ বালিকা :- কেন না অবশ্যই খেতে দিব । কিন্তু তুমি কি খেতে পছন্দ কর, তা জানি না ?





Comments

Popular posts from this blog

অজেয় তারুণ্য / শিশির আহাম্মেদ খান

রক্ত গঙ্গা / শিশির আহাম্মেদ খান

White - Shishir Ahmed Khan