মেঘ বালিকা- শিশির আহাম্মেদ খান

 মেঘ বালিকা (পর্ব-১)

(দস্যি ছেলে গল্পের বই থেকে নেওয়া)


ইমন রাগ করেছে বড় বোন মনির সাথে। তাই মন খারাপ করে বসে আছে পুকুর ঘাটে। মনটা খুব খারাপ, সে পণ করেছে কারো সাথে কোন কথা বলবে না।সে সবার কাছে আঁড়ি নিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে এল বলে চারিদিকে আবছা অন্ধকার নামছে ।মাথার উপর পুকুর পাড়ে থাকা শিউলি গাছের ডাল ঝুলে আছে । কি মিষ্টি গন্ধ ছড়াচ্ছে শিউলি ফুলের। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু ঝড়া ফুল পড়ে আছে ।

ইমন বসে বসে সে ফুল কুঁড়িয়ে এক জায়গায় রেখে নিজের গেঞ্জি থেকে সুতা খুলে একটা মালা গাঁথল । এত সুন্দর দেখাচ্ছিল মালাটা ,দেখে ইমন ভুলেই গেল কিছুক্ষণ আগে তার মন খারাপ ছিল। পুকুর ঘাটে মালাটা রেখে বাড়ি ফিরে এল। সে সময় এদিক দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল মেঘ রাজ্যের রাজকুমারী মেঘ বালিকা......

মেঘ বালিকা সাদা মেঘের বেলায় উড়ে বেড়ায় ।যখন যে দিকে ইচ্ছে সে দিকেই উড়ে যায় ।মেঘ বালিকা পুকুরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেল পুকুর ঘাটে একটা মালা পড়ে আছে ।
মেঘ বালিকার প্রিয় ফুল শিউলি আর সেই ফুলের মালা তার চাই চাই ! তাই সে মালাটি উঠিয়ে নিল। মেঘ বালিকা মালা টা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল, কোন রাজ পুত্র না জানি এ মালা গেঁথেছে। কি বাহারি সুতা দিয়ে মালা গেঁথেছে । মেঘ বালিকা মনে মনে পণ করল এই রাজকুমার কে যে করে হোক সে দেখবে। কত না জানি সুন্দর সে ! কিন্তু ততক্ষণে সেখানে রাত নেমে এলো। চারিদিকে গুট গুটে অন্ধকার। তাই মেঘ বালিকার মন খারাপ হয়ে গেল।

রাতের বেলায় মেঘ বালিকা তাঁরা দের সাথে লুকোচুরি খেলে ঘুমাতে যেত। কিন্তু আজ সোনার পালংকে বসে মালার দিকে চেয়ে কি যেন ভাবছে।দু' চোখে শত চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না । মেঘ রাজ্যের রাজকুমারী চোখে রাত আজ অনেক লম্বা হয়ে গেছে। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল , সে টের পেল না। পরদিন খুব বেলা করে ঘুম থেকে উঠল মেঘ বালিকা। ভুলে গেল গতকালের কথা গুলো।পরে আবার যখন মনে পড়ল তখন বিকাল.....

ইমন স্কুল থেকে এসে গোসল সেরে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল । ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখল সে , মেঘের উপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে । তার দুইটা বিশাল ডানা গজিয়েছে পিঠের উপর। এক সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল, বাহিরে চেয়ে দেখল বিকেল হয়ে গেছে । বিছানা ছেড়ে দু চোখ ডলতে ডলতে পুকুর ঘাটে গিয়ে বসল ।পুকুরের জলে মাছ আর মাছরাঙ্গার লুকোচুরি খেলা দেখছিল। হঠাৎ নীল রংঙ্গের একটা পাখি কোত্থেকে জানি উড়ে এসে বসল ।পাখিটা ঠোঁটে কিছু একটা দেখা গেল। পাখিটা সে জিনিস টা ইমনের পায়ের কাছে ফেলে দিল। ইমন জিনিস টা কুঁড়িয়ে নিল এবং খুব পরখ করে দেখল।জিনিস টা আগে কখনও দেখেছে বলে মনে হয় না।

কালো একটা আবরণে মোড়ানো ,কি আজব জিনিস ! অনেক সময় ধরে পরখ করল ।কিন্তু সে চিনতে পারল না।এমন সময় পুকুর জলে ঢেউ ওঠল এবং একটা আবছা জল ছবি ভেসে ওঠল । ছবি টা মানুষের মতন কথা বলতে লাগল। ছবিটা বলল , কুমার শুন মন দিয়ে । তুমি যদি এই বস্তুটি মাটি খুঁড়ে পুতে রাখ , তবে অনেক ভালো হবে ।

ইমন :- আমি এইটা কোথায় পুঁতে রাখব ?
জলছবি :- কেন পুকুর পাড়ের ঐ দক্ষিণ দিকটায়, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ (ছবিটা মিলিয়ে গেল)। ইমন দা দিয়ে গর্ত করে বস্তুটা মাটি চাপা দিয়ে পুকুর থেকে পানি মগ দিয়ে তুলে ছিটিয়ে দিল এবং সে বাড়ি চলে এল।এক দিন, দুই দিন এমনি করে সাত দিন কেঁটে গেল। ইমন ভুলেই গেছে সেই দিনের ঘটনা। সেদিন দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে হাটতে হাটতে পুকুর ঘাটে এসে দাঁড়াল । তখন মনে পড়ে গেল সেই দিন বিকেলের ঘটনা।ইমন দৌড়ে গেল সেই খানটায় ,যেখানে ঐ কালো বস্তুটা পুঁতে রেখে ছিল । ওমা একি ! কি সুন্দর একটা চারা গাছ। চারাটার সবুজ কঁচি কঁচি পাতা গজিয়েছে। ইমন আরো একটু অবাক হল অন্য একটা বিষয় দেখে । সেটি হল হল, এই চারা গাছ টায় কে যেন পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে । দেখে মনে হচ্ছে এখন ই বৃষ্টি হয়েছে। সারা দিন সে এই গাছটা নিয়ে ভাবতে লাগল। 

Comments

Popular posts from this blog

অজেয় তারুণ্য / শিশির আহাম্মেদ খান

রক্ত গঙ্গা / শিশির আহাম্মেদ খান

White - Shishir Ahmed Khan