ঝন্টুর (পর্ব-2) শিশির আহাম্মেদ খান
দুই ভাই ছানা দুই টা এনে পিঞ্জরের ভিতরে রেখে দিল । মন্টু খুব খুঁশি ছানা দুই টা পেয়ে ।ছানা গুলোকে চালের খুদ ভিজিয়ে খাইয়ে দিল ঝন্টু নিজ হাতে । মন্টু তা দেখল , কি করে খাইয়ে দিতে হয় । তাদের এখন খুব ব্যস্ততা । নাওয়া - খাওয়া ভুলে শুধু ছানা দুইটার সেবা-যত্ন করতে থাকল ।
একদিন গেল, দুই দিন গেল , ছানা গুলো বড় হতে লাগল। ও মা কি সুন্দর পালক গজাচ্ছে ছানা গুলোর গায়ে । এখন ঝন্টু আর মন্টুর অনেক ভক্ত হয়ে গেছে ছানা গুলো । ঝন্টুর মা ও মাঝে মধ্যে ছানা গুলোকে খাবার দেয় । এখন পালক গুলো অনেকটা ওঠে পড়েছে । একটু আধটু ডাক দেয় । এই ডাক শুনে ঝন্টু আর মন্টু মহা খুঁশি ।
তারপর একদিন দুপুরে আকাশ কালো করে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হল । সারা বিকেল ঝড় বৃষ্টির পরে ও রাত অব্দি চলল । ঝন্টু - মন্টু ঘরের মধ্যে থাকল , আর ভের হল না । খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ল ওরা
ঝন্টু ঘুম থেকে ওঠে বাড়ির সামনের জমিতে জমে থাকা পানিতে ব্যাঙ ডাকছে শুনে দৌড়ে গেল। ঝন্টু ত অবাক , এত বড় বড় গোলা ব্যাঙ ! দেখতে হলুদ আর সাদা আর যখন ডাকে কেমন যেন লাগে । এসব দেখে মাথার মধ্যে একটা দুষ্টুমি খেলে গেল । আশপাশ থেকে ইট খুঁজে এনে ব্যাঙ গুলো থেঁতলে মারতে শুরু করল । কয়ে’ক টা মারার পড় ব্যাঙ ডাকা বন্ধ করে দিল।
ঝন্টু পানি থেকে উঠে রোদে বসল , অমনি কয়ে’ক টা শালিক পাখি উড়ে এসে কিচিরমিচির করতে লাগল। তখনই মনে পড়ে গেল পাখির ছানা দুটোর কথা । এক দৌড়ে বাড়ি এসে পিঞ্জরের কাছে দাঁড়াল। একি , ছানা দুটো কই ? একটু দুরে ছোট দু একটা কঁচি পালক পড়ে আছে। আর তা পিপড়ের দল টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।তার অদূরে একটা পা পড়ে আছে। ঝন্টুর বুঝতে আর বাকি রইল না ছানা দুটোর ভাগ্যে কি ঘটেছে।
ঝন্টু মন খারাপ করে বাড়ির অদুরে একটা জাম গাছের নিচে বসে রইল। হঠাৎ করে চোখে পড়ল পাশের আম গাছের ডালে বিরাট একটা ভিমরুলের বাসা বানিয়েছে। এই দেখে ওর মনটা ভালো হয়ে গেল। কারণ ভিমরুলের বাসায় ঢিল ছুঁড়ার একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় আসল । যেই চিন্তা , সেই কাজ একটা মাটির ঢিল নিয়ে ছুঁড়ে মারলো ভিমরুল এর বাসায়। অমনি ভিমরুল বের হয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে লাগল।
একটা ভিমরুল এসে ঝন্টুর বাম চক্ষে হুল বসিয়ে দিল। ঝন্টু দৌড় দিল আর ওরে মারে , ওরে বাবারে বলে চিৎকার করতে লাগল। আরও আট দশটা ভিমরুল হুল বসালো তার পিঠে , মাথায় । পাশে একটা গরু বাধাঁ ছিল, ভিমরুল ঐ গরু টা কে প্রচুর পরিমাণে হুল ফুটালো যে , গরুটা সাথে সাথে মরে গেল। ঝন্টু কোন রকমে বাড়ি এসে পড়ল।
ঝন্টুর মা ঝন্টুর এ অবস্থা দেখে তারাতারি ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে আসল।ডাক্তার ঔষধ লিখে দিল এবং ইঞ্জেকশন ভরে দিল। শরিরে হুল ফুটানো স্থানগুলো লাল হয়ে ফুলে গেছে। শরিরে জ্বর উঠল , সে প্রচুর জ্বর । বাম চোখ ফুলে গেছে , সে বাম চোখে খুব ভার অনুভব করছিল।
ঝন্টু বার বার মা মা বলে চিৎকার করে উঠছে । জ্বরের গোড়ে আবল তাবল বলছে । মা ঝন্টুর গায়ে কাথাঁ চেপে দিয়ে মাথার কাছে বসে দু' চোখের পানি ফেলছে ।
রাত শেষ হয়ে আসল , মসজিদে আযান পড়ল , পাখিরা কলতান করে ঘুম ভাঙানির গান গাইতে লাগল ।আস্তে আস্তে ফুল পাখি সকলেই জেগে ওঠল দিনের আহ্বানে।
ঝন্টু মায়ের হাত চেপে ধরে বার বার বলছে মা ওরা আই তা ছে .... ওরা আই তা ছে.......
বলতে বলতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল । এই ঘুম আর ভাঙ্গাবার নয় .....
Comments