রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা (5) - শিশির আহাম্মেদ খান
রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা (5)
একটা হাত আমার কপালে আলতো করে ছুঁয়ে গেল । হাত টি অপরিচিত মনে হচ্ছে । তারপরও কেমন যেন একটা অনুভূতি হল আমার মাঝে । চেহারাটা দেখি না ,কিন্তু একটা হাতের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি । এই হাত কি কোন রমনীর হাত, যে হাতের স্পর্শ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল যৌবনের প্রথম লগ্ন থেকে । সে হাত আজ আমার কাছে , আমার কপালে সে স্পর্শ করেছে । আজ কে কি তাকে খুব কাছ থেকে দেখতে পাব ! আজকে আমি সেই হাতটা ধরব ! আমি হারাতে দিব না আমার স্বপ্নে দেখা সেই রাজকুমারী কে ! ফিশ ফিশ করে কে যেন বলছে , এই হাত ছেড়ে দে , ছাড় বলছি , নইলে খুব খারাপ হয়ে যাব কিন্তু ... এ কি ! কে কথা বলছে । এত বিচ্ছিরি কর্কশ কন্ঠ। আমার সুন্দর মুহুর্ত টা কে নষ্ট করে দিচ্ছে ।
চোখ খুলতে এ কি এক উদ্ভট চেহারা আমার চোখের সামনে , তার হাতটা আমি শক্ত করে ধরে আছি ! কে ? ভাই কে আপনি ?
পকেট মার :- সেইটা তোমার জাইন্না লাভ কি ? হালা ফকিন্নি , পাঁচ ট্যাকা ছাড়া কিছুই পাইলাম না ।
রাতুল :- দেখ ভাই আমি পাঁচ টাকাই সামলাতে পারি নাই, তুমি নিয়ে নিলে, বেশি টাকার মালিক হলে কি বিপদ !
পকেট মার :- এ স্যাচরা , নে তোর পাঁচ টেকা। আমার পঞ্চাশ টেকা লাগব ।
রাতুল :- কিন্তু আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা নাই । আপনি এই পাঁচ টাকা ই নিয়ে যান । আরেক দিন আপনাকে বাকী পয়তাল্লিশ টাকা দিয়ে যাব ।
পকেট মার :- তুই বেটা আমার লগে মশকরা করছ । আজক্কা টেকা না পাইলে পরে কি অয়ব , সারাদিন গেল পেটে কিছু পড়ে নাই। মাথা নষ্ট হইয়া আছে ।
রাতুল :- এই কথা , আমার সাথে চলেন । বেগুন বাড়ি বস্তিতে ,ঐ খানে আমার একটা খালা আছে আপনাকে পেট ভরে ভাত খাওয়াব । কোন টাকা লাগবে না । আমার যখন খুব ক্ষুধা লাগে দুই তিন দিন উপুষ থাকি , আট -দশ কিলোমিটার হেটে এসে খেয়ে যাই । কি মজার রান্না , মুখে দিলে মনে হয় অমৃত।
পকেট মার :- দুর শালা , ভাত ত মানুষ খায় , আমি কি মানুষ যে ভাত খামু ।
রাতুল :- তা হলে আপনি কে ? আর কি খান আপনি ?
পকেট মার :- (একটা হাসি দিয়ে ) আমারে চিনস না । আমি রাজা আর রাজা কখনও ভাত খায় না । রাজা খায় গাঁজা । এক সপ্তাহ ধরে গাঁজার পিনিক এর মধ্যেই আছি । কিন্তু আজকা পেটে পরে নাই। তাই টাকা খুচচ্ছি ।
রাতুল :- কিন্তু আমার কাছে এই পাঁচ টাকা ই ছিল। এক কাজ করা যায় , আপনি বাকি তে কিনুন । আমি দুই দিন পরে এসে দিয়ে যাব।
পকেট মার :- এই কথা বিশ্বাস করব না। চইলা যান, মুরগি খোঁজ কইরা নিমুনে।
রাতুল :- কিন্তু আমি কারু উপকার করতে চাইলে , সেটা করে ছাড়ি ।
পকেট মার :- আপনে কে ঠা ভাই ? শালা .....
রাতুল :- আমি ? আমি এক জন পথিক !
পকেট মার :- কে য়া বাত হে , এ কে বারে রাতুল ভাই এর মতন কাব্যিক কথা । আমি তখন ফার্স্ট ইয়ার এ ভর্তির হয়েছি মাত্র, লতিফ (ছাত্রাবাস) এ রাজনৈতিক বলকে উঠছি । প্রতিদিনই সন্ধ্যায় সিনিয়র ভাই এর রুমে চলত আশীর্বাদ পর্ব। এক হাতে ইস্টিক (গাঁজা র ) আরেক হাত উঁচু করে প্রায় ঘন্টা খানেক জ্ঞান নিবেদন। কত আদর্শিক কথা , দেশপ্রেম এর কথা । ন্যায় নৈতিকতার শিক্ষা , সিনিয়র দের দেখা মাত্র সালাম ঠুকতে হবে , কোথাও সিনিয়রা বসা থাকলে , সেই খানে বসা যাবে না । বলকে সীফটি করে রাতে রাম দা আর ছুড়ি হাতে পাহাড়া দেওয়া । গাঁজার ধোঁয়ায় রুম আচ্ছন্ন, যারা কখনও সিগারেট ও খায় নাই, ওদের সে ধোঁয়ায় পিনিক হয়ে যেত । রুমের মশা গুলো গাঁজার নেশায় মাতাল হয়ে কামড় ভুলে শুধু ভন ভন করতে থাকত । মাঝে মধ্যে গায়ে বসে কামড় না দিয়ে ঘুমিয়ে যেত ।
আমাদের গ্রুপে আমাকে নেতা বানিয়ে দিল , বড় ভাই এর পাশে বসাল । অনেক সময়ে আমাকে একা ডেকে বসে কথা বলত । প্রায় সময়ই আমাকে দিয়ে স্টিক (গাঁজার) ধরিয়ে দিতে বলত । একদিন দুই দিন এই ভাবে চলতে চলতে কখন যে নিজেই গাঁজায় আসক্ত হয়ে গেছি টের পাই নি ।
একদিন একা বসে চা খাচ্ছিলাম খালার চায়ের দোকানে । পাশে বসে আরেক জন চা খাচ্ছে মনে হচ্ছিল খুব ভদ্রলোক , আমি সিগারেট ধরতেই লোকটা একটু সড়ে বসল । আমি জিজ্ঞেস করলাম , কি ফার্স্ট ইয়ার ?
ভাই তখন খুব শান্ত ভাবেই উত্তর দিল থার্ড ইয়ার , আপনি ফার্স্ট ইয়ার......
আমি একটু হক চকিয়ে বললাম ফাইনাল ইয়ার এ ...
ভাই হেসে দিল, আস্তে করে বলল, আপনার বড় সাজার দরকার নেই। তিন বছরে অভিজ্ঞতা ভুরি ভুরি, তবে জীবনের হাজার বাকের একটা বাক যদি ভুল হয়ে যায় ! পুরো জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যায় । আসলে জীবন মানে একটা জার্নি, এই গতি শীল গতির মাঝে এক চুল এদিক ওদিক হলেই গিরি খাদ , যেখানে পড়লে উঠা কঠিন। আজকে যে বড় ভাই গুলো ভালবাসার বাঁধনে বুকে টেনে নিচ্ছে , কালকে হয়ত সেই বড় ভাই কৌশলে ছুরি বসিয়ে যাবে কোন এক সার্থের কারণে .....
Ok ভাই ভালো থাকেন ক্লাস আছে ....
আমি তার নাম জিজ্ঞেস করতেই সে হেসে কৌশলে উত্তর এরিয়ে চলে গেল। শুধু বলেছিল , আমি ? আমি এক জন পথিক ! যে অন্যের পথে দেখতে পাওয়া দুর্ঘটনা কে জানাতে চায় ঐ লোক গুলো কে । দেখা হবে, কথা হবে , আসি ....
Comments