পদ্মার বনাম ক্রিমিয়া ব্রিজ
পদ্মা বনাম ক্রিমিয়া ব্রিজ
# সব নিয়ে এত মাতামাতি যেন পৃথিবীর আর কেউ এত বড় সেতু কোন কালে করে নাই ? #
পদ্মা সেতুর সাথে যে ব্রিজটি সবচেয়ে তুলনীয় তা হচ্ছে, আজভ সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মাঝে নির্মিত ক্রিমিয়ান ব্রিজ।২০১৪ তে ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়া, এই ব্রিজটি নির্মাণের মাধ্যমে দখলকৃৎ ক্রিমিয়াকে নিজের মুল ভুখন্ডের সাথে সংযুক্ত করে। এইটা ইউরোপের দীর্ঘতম ব্রিজ।
২০১৬ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শুরুর সময়কালেই এই ব্রিজটির নির্মাণ শুরু হয়।
বাংলাদেশে পাইলিং এর গভীরতার কারণে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতার একটি আলাপ আছে। পদ্মা সেতুর কিছু কিছু পাইলিং এর গভিরতা সর্বোচ্চ ৩৮৩ ফিট।
ভলকানিক জোনে সাগরের উপরে নির্মিত ক্রিমিয়ান ব্রিজের অধিকাংশ পাইলিং গভিরতা ৩০০ ফিট। এই ব্রিজটির কাছে সাগেরের নীচে ৭০ টি ছোট ছোট ভলকানো রয়েছে।
পদ্মা সেতুর নদীর উপরে পিলারের সংখ্যা ৪২ টা পিলার, প্রতিটা পিলারে ৬ টি করে, মোট পাইল সংখ্যা ২৫২ টি। (বিভিন্ন নিউজ পেপারে বিভিন্ন সংখ্যা, ২৪২/২৮৬ ইত্যাদি)।
ক্রিমিয়ান সেতুর পাইলের সংখ্যা ৭০০০ এর উপরে। ( সুনির্দিষ্ট সঠিক সংখ্যা খুজে পাই নাই)।
তো, পদ্মা সেতু থেকে ক্রিমিয়ান ব্রিজে পাইলের সংখ্যা প্রায় ২৭ গুন বেশী।
হওয়ারই কথা কারন, পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য যেখানে ৬.৪ কিমি, ক্রিমিয়ান ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১৮ কিমি।
যেহেতু এইটার নীচ দিয়ে, বড় বড় জাহাজকে যেতে হয়, ক্রিমিয়ান ব্রিজে স্প্যানের নিচে সাগরের পানির পর্যন্ত ক্লিয়ারিং আছে, ৩৫ মিটার।
নদীর উপরে স্থাপিত পদ্মা সেতুর ক্লিয়ারিং আছে ১৮ মিটার।
পদ্মা সেতুতে মাত্র সিঙ্গেল লাইন রেল ট্রেক, ক্রিমিয়ান ব্রিজে ডবল লাইন রেলওয়ে ট্রাক।
পদ্মা সেতুর প্রস্থ ৬০ ফিট।(উইকি), ক্রমিয়ান ব্রিজের প্রস্থ ৭২ ফিট।
২০১৬তে কাজ করে সাগরের উপরে নির্মিত ১৮ কিমি লম্বা ক্রিমিয়ান সেতুর সড়ক অংশ ২০১৮ সালে এবং রেলওয়ে অংশের কাজ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে, মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে।
২০১৬ তে কাজ শুরু করে, ৬.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর কাজ ২০২২ এ এখনো শেষ হয় নাই, রেলওয়ের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে, এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার কিন্তু ২০২৪ পর্যন্ত খরচ কই যাবে কেউ জানে না।
কিন্তু মোস্ট ইম্পরটান্ট হচ্ছে, ক্রিমিয়ান সেতুতে কোন টোল নাই, এইটা আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে ট্রাক বাস গাড়ি দিয়ে পাড়ি দিতে পারবেন। কিন্তু,
পদ্মা সেতুতে অধিকাংশ পরিবহনে আপনাকে পূর্বের ফেরি পরিবহনের খরছের তুলনায় প্রায় ১.৫ গুন বেশী খরচ দিতে হবে।
পৃথিবীর কোন দুইটা ব্রিজ একই না, ফলে, দুইটা ব্রিজের মধ্যে আপেল টু আপেল তুলনা করা যায় না।
কিন্তু , এই তুলনা থেকে স্কেল সম্পর্কে ধারনা করতে পারতেছেন, সিমিলার টাইমে শুরু সিমিলিয়ার খরচ, উভয়েই ৪ লেন, উভয়ের উপরে রেল যাবে ।
পদ্মা সেতুতে পলির কারণে, মাটির ৩০০ ফিট গভিরেও পাইলিং করতে হয়েছে, ক্রিমিয়ান সেতুতেও টেকটোনিক প্লেটের উপরে এবং নরম কাদা মাটি থাকার কারণে প্রায় ৩০০ ফিট গভীরে গিয়ে শক্ত ফাউন্ডেশান খুজতে হয়েছে ।
কিন্তু, একটা প্রায় ৬ কিমি, আরেকটা ১৮ কিমি।
একটা সাগরের উপরে একটা নদীর উপরে।
এক্টার নীচ দিয়ে জাহাজ যেতে পারবে, আরেক্টার নীচে দিয়ে ট্রলার।
তারপরেও একটা ফ্রি, আরেকটাতে ৩০ বছরে ধরে টোল দিতে হবে।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির খবর এই প্রজেক্টে যারা কাজ করেছে সেই ইট, বালু , সিমেন্ট কন্ট্রাক্টরদের সাথে আলাপ করে নিয়েন। আমি এর ভেতরে যাবো না। বাংলাদেশের সব প্রোজেক্টেই দুর্নীতি হয়। সব সরকারের আমলেই হয়। দুর্নীতির স্কেল নিয়েও কোন আলাপে যাবো না।
কিন্তু যেইটা অশ্লীল চূড়ান্ত লেভেলের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণের উদাহরন হওয়ার কথা সেইটাকে বড়াইয়ে রূপান্তর করা হয়েছে।
৮ বছরে ধরে পিলারে পিলারে উদ্বোধন,লাইট জ্বালালে নিউজ , বিসিএসের পরিক্ষায় প্রশ্ন উত্তর বা ছাত্র ছাত্রীদের পড়ার বইয়ে সেইটা নিয়ে চ্যাপ্টার সংযোজন, চায়না একজিম ব্যাংক থেকে পারশিয়াল ঋণ নিলেও সম্পূর্ণ নিজের খরছে করার মিথ্যাচার সহ যে ভয়াবহ প্রপাগান্ডা পদ্মা সেতু নিয়ে করা হচ্ছে তা নেচার অফ রিয়ালিটিটাকেই পালটে দিয়েছে ।
অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতির উদাহরন হওয়ার বদলে পদ্মা সেতুকে এমন একটি গর্বের জায়গা হিসেবে নেওয়া হয়েছে যেন বাংলাদেশে বা পৃথিবীর অন্য কোথাও আগে কোন দিন এতো বড় বা গভীর বা জটিল ব্রিজ হয় নাই। পদ্মা সেতু নিয়ে সত্যই যদি কোন মিউজিয়াম করতে হয়, সেইটা করতে হবে, নির্লজ্জতার মিউজিয়াম।
Comments