রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা (4) - শিশির আহাম্মেদ খান
রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা-4
থানা থেকে ভের হয়ে হাটতে শুরু করলাম শান্তিনগর দিয়ে মৌচাক মোড় হয়ে মালিবাগ রেলগেট হয়ে হাটব। আচ্ছা এই এলাকার নাম শান্তিনগর কেন রাখল ? এই প্রশ্ন আরো একবার মাথার মধ্যে গুরপাক খেয়েছিল , উত্তর মিলাতে পারিনি।
কেউ হয়ত এই স্থানে শান্তির কোন নজির পেয়েছিল , তাই নাম দিয়েছিল শান্তি নগর ! আবার এমনও হতে পারে যে এই এলাকাটি সংস্কার করেছিলেন তার কন্যা বা স্ত্রীর নাম ছিল শান্তি । যাই হোক আমার জানা অশান্তির খবর আছে এই এলাকায় বসবাসকারী কিছু লোকের। যেমন হোসেন সাহেবের কথা যদি বলি , অনেক টাকার মালিক, ছয়তলা দুই দুইটা আলিশান বাড়ি। মাসে মাসে অনেক টাকার ভাড়া পান। ছেলে নেশাগ্রস্ত, সকাল বিকাল পিনিক এর মধ্যে ডুবে থাকে । মাসে একবার করে জেলে ঢুকে কি জামিনে ভের হন । মেয়ে ঘরের নাতি একটা, তা ও প্রতিবন্ধী ।বউ মারা গেছে ছয় বছর । হোসেন সাহেবের হার্টের সমস্যা , ডাইবেট্রিকস এর কারনে খাবারদার নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু তিনি ছিলেন এক সময়ের দাপটে সরকারি কর্মকর্তা । টাকার জন্য জান জীবন কোরবান করে দিয়েছিলেন। হালাল হারাম চেনার কোন চিন্তা , ইচ্ছা ছিল না ।
মাঝে মধ্যে তার কাছে গেলে জীবনের গল্প গুলো গদ গদ করে বলতে থাকেন। আফসোস করে বার বার বলেন, কি ভুল না করছি হালাল-হারাম না চিনে ! হারাম এ আরাম নাই, অট্টালিকায় শান্তি নাই, শান্তি গাছ তলায় ।এই কথা যতোবার বলেন ততবারই তার দু, চোখ ছলছল করে উঠে ।
যান্ত্রিক এই পৃথিবীতে যত বিপদ আপদ এসেছে তা মানুষ ই করেছে । এখন যে করোনাভাইরাসের মহামারী চলছে , প্রতিদিন গড়ে বিশ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, তা মানুষের জন্য ই ঘটেছে । মানুষ তাঁর ক্ষু’ধা’র্ত চেহারাটা সীমা লঙ্ঘন করে যখনই ইঁদুর , বাঁদুড়, সাপ , বিচ্ছু খাওয়ার উপকরণ করে বসল , তার ফলাফল সোয়ান ফ্লু, বার্ড ফ্লু, কোভিড-১৯ উৎপত্তির হল । এই করোনাভাইরাসের পৃথিবীতে সংক্রমণ হওয়ার আগে কিছু মানুষ আর কয়ে’ক টা দেশ নিজেদের কে মনে করেছিল ওরা পৃথিবীতে অমরত্ব নিয়ে এসেছে । ওরা এমন এক সুপার পাওয়ার হয়ে উঠেছিল যে , কাউকে কোন হিসেব করত না। অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির কারণে দিন কে দিন দানবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাদের কাছে আছে মানব সভ্যতা ধ্বংস করার পারমাণবিক বোমা , অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান আছে খুব উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মারাণাস্ত্র । কিন্তু আজ সব বিফলে , করোনাভাইরাসে কাছে এইসব অস্ত্র অসহায় । এই পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদীরা সারাজীবন শুধু মানুষ হত্যার জন্য চিন্তিত থাকে , সেটা শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে । কিন্তু মানুষের জীবন রক্ষার জন্য এত অর্থ সময় ব্যয় করে না ।
তাই বুঝি সাধারণ মানুষ গুলো বলতে শুনি আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছে । আল্লাহ করোনাভাইরাস দিয়ে তাদের অপরাধের বিচার করছেন। সাধারণ মানুষের সেই সরল উক্তির মাঝে দারুণ একটা লজিক আছে । তা ছাড়া বাস্তবতার সাথে মিল ও খুঁজে পাওয়া যায় । কারণ ওরা যখন অত্যাচারিত হত তখন তাদের আত্মচিৎকারে কেউ সারা দেয় নি । কিন্তু তাড়া নিরবে কেঁদে ছিল, সেই কান্না ছিল হৃদয় নিংঙ্গানো এক বিভর্ষ আত্মজিজ্ঞাসা ! সে কান্নার ফসল বুঝি এই করোনা মহামারি। সিরিয়ার যুদ্ধে বোমা হামলায় আহত ৩ বছরের একটা ছোট্ট শিশু কে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যুর আগে সে বলেছিল , আমি আল্লাহ কে সব বলে দিব। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে সে আল্লাহ কে সত্যিই সব বলে দিয়েছি।তা না হলে আজ পৃথিবীর এই ভয়াবহ অবস্থা হওয়ার কথা ছিল না । আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন , আরাকান, সিরিয়া আর লিবিয়ার মানুষের উপর চালানো গণহত্যার জন্য পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদীরা ও তাদের মিত্ররা কখনও কষ্ট বোধ করেনি। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই প্রাকৃতিক ধ্বংস লিলায় নাস্তানাবুদ। কথায় আছে না , সষ্ট্রা ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না ।
হাটতে হাটতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি , কোথাও একটু বিশ্রাম করার জন্য দাঁড়ালাম । অনেক ক্ষণ ধরে হাটছি , জায়গাটা হাতির ঝিল। হাতির ঝিল , ঢাকা শহরের এই স্থান টা তে আসলে কেন জানি মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি চলে আসে । ২০০৯/২০১০ সালে এই জায়গাতেই তখন মাত্র বালি ফেলে কাজ শুরু করবে । আমাদের প্রিয় বালুর মাঠ যেখানে গিয়ে আমরা ক্রিকেট খেলতাম । কত উচ্ছ্বাস ছিল সেই সময়ে ! ক্যাম্পাসে দুই গ্রুপের মারামারির কারণে হলের মধ্যে হামলা হলে ও আত্মরক্ষার জন্য এই বালুর মাঠে আশ্রয় নিত প্রতিপক্ষ। পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার হলে ফেরা । সেই লতিফ ছাত্রাবাস ! কত স্মৃতির উত্থান আর কত স্মৃতির কবর রচিত এই লতিফ ছাত্রাবাসকে গিড়ে। সব কথা অলিখিত রয়ে গেল , হয়ত ভবিষৎ তে ও কেউ লিখবে না লতিফছাত্রাবাস কে গিড়ে গল্প গুলো ।
Comments