রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা -(8) শিশির আহাম্মেদ খান
রাতুলের বিড়ম্বনার যাত্রা (- 8)
শিশির আহাম্মেদ খান
লোক :- ও ভাই, বইয়া ঘুম দিছেন না কি ?
রাতুল :- না মানে .......লোক :- না মানে আবার কি , আপনে ডরাইছেন ?
ডরানের কোন কারণ নাই। এই ডা আমার এরিয়া , এই হানে আমার অনুমতি ছাড়া একটা কাক পক্ষি ও জিগাইব না । আপনে নিশ্চিত থাহেন মিয়া ...
রাতুল :- আসলে আমি ভবঘুরে মানুষ, আমাকে কে জিজ্ঞেস করবে । আমার কাছে কোন অর্থ নাই, কোন সম্পদ নাই ।
লোক :- হে হে হে সম্পদ ! সম্পদ হে হে হে ! বিড়ি খান , কষ্ট দূর হইব ......
রাতুল :- আমি ধূমপান করি না। এই ধূমপান শরিরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনি যানেন ধূমপানের কারণে প্রতি বছর কোটি কোটি লোক মারা যায়।কিন্ত কারো কষ্ট দুর করতে পারে না বিড়ি সিগারেট এর ধুয়া। আরো নতুন নতুন অসুখে কষ্ট বাড়িয়ে দেয়।আমার কোন কষ্ট নাই, ভবঘুরে মানুষের আবার কষ্ট কি !
লোক :- কন কি ভাই , আপনের কোন দুঃখ্য নাই ?
এই ডা কোন কথা অইল..... হা হা হা ।
আমি জানতাম পৃত্থিবীর সব মানুষের দুঃখ্য কষ্ট আছে ....
রাতুল :- থাকতে পারে , কিন্তু আমি সুখী মানুষ। আলোর বিপরীতে যেমন অন্ধকার থাকে , তেমনই হাজারো দুঃখি মানুষের ভিড়ে আমার মতন সুখি মানুষ ও আছে পৃথিবীতে । আপনি হয়ত যাদের সাথে এই পর্যন্ত পরিচিত হয়েছেন তারা তাদের কোন না কোন কষ্টের কথা আপনার কাছে শেয়ার করেছে । এই কারণে আপনি ভাবছেন পৃথিবীর সবাই বুঝি অসুখী।
লোক :- বাহ আপনের কথা গুলাইন দার্শনিক এর মতন মনে অইতাছে। আমি এমন কইরা কহনও চিন্তা করি নাই ।
রাতুল :- মানুষ অন্য কে সব সময়ই নিজের প্রবৃত্তির মতন করে চিন্তা করে । এই চিন্তার আগুনে সে যুগ যুগ ধরে জ্বলতে থাকে । ধরুন আপনার জীবনে এমন কোন দুর্ঘটনা ঘটেছিল, যা আপনার মনের মধ্যে স্থায়ী দাগ ফেলেছে । যার কারণে আপনার জীবনের ছোট্ট ছোট্ট হাজারো সুখ স্মৃতি জমা থাকলে ও আপনি কষ্ট টাই পুষে রেখেছেন.....
লোক :- হা হা হা হা ....... কে আপনি কে ? কি করে এত কিছু জানেন ?
রাতুল :- আমি বললাম না , আমি ভবঘুরে । ভবঘুরে মানুষ অন্য সব মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে । যেমন ধরুন আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন। ভাবছেন আমি কোন এ.....
লোক :- থাক আর কইতে অইব না , আজ থেইকা আপনি আমার গুরু । জীবনে কত মানুষ দেখলাম, আমায় দেখলে ভয়ে থর থর করে কাঁপে । কত মানুষ যে পাঠিয়ে দিছি দয়ালের ঠিকানায় ।
রাতুল :- দয়াল টা আবার কে ?
লোক :- আরে গুরু দয়াল চিনেন না ! যে আমাগ সৃষ্টির ছে ।
রাতুল :- ও ! তার মানে আপনি মানুষ খুন করেন ?
লোক :- আস্তে গুরু আস্তে , দেয়ালের ও কান আছে ।
কেউ যদি আমার পথে কাটা হইয়া দাঁড়ায় , তারে তার ঠিকানায় পাঠাই দেওয়া ছাড়া কি করুম। সব সময়ই মাথা গরম থা হে ।
রাতুল :- মানুষ হয়ে মানুষ কে হত্যা করা কতই না ভিবৎষ ! কখনও সেই ভিবৎষ তার কথা চিন্তা করেছেন।
লোক :- চিন্তা করার সময় পামু কই, চিন্তা করলে ত মানুষ মারা যায় না । আর আমি জীবনে একটা ভালা মানুষ ও খুন করি নাই।
রাতুল :- তা কি করে হয় ?
লোক :- জীবনের প্রথম খুন করেছিলাম আমার বউ কে , যাকে জীবনে সব থেকে বেশি ভালোবাসতাম । সেই কলেজ জীবনের প্রেম, তিন বছর প্রেমের পর আমাগ বিয়ে । বিয়ের প্রথম তিন মাস মনে হয়ছে বেহেস্ত আছি । হের পর শুরু অইল অশান্তির আগুন। বিয়ের আগের ভালো’বাসা কই যেন হারায়া গেল । আসলে বেকার ছেলের জীবনে বিয়ে টা অভিশাপ স্বরূপ। বাবা মা এর চেহারার রং ও তখন পাল্টায় যায় । এক দিকে অভাব অন্য দিকে অশান্তির আগুন আমি আর মেনে নিতে পারছিলাম না । কলেজ জীবনে আমার বন্ধুর কোন অভাব ছিল না । বিয়ের পরে অনেক বন্ধু আমার বাড়ি আস্ত। একদিন বুঝতে পারলাম বন্ধু নামের এক বিশ্বাস ঘাতক আমার স্ত্রীর
সাথে পরক্রিয়ায় লিপ্ত। প্রথম প্রথম বউ ডারে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। সে অস্বীকার করত। একদিন হাতে নাতে ধরা পড়ল। হের পর আর বইয়া থাহার সময় কই । হের পরনের সাড়ি দিয়া গলায় দিলাম প্যাচ , এক্কেবারে শেষ কইরা ঝুলাই দিলাম। ভিতর দিয়ে দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়া বাহিরে বের হয়ে চরে গিয়ে বন্ধুদের সাথে তাস খেলায় বসে পড়লাম। সারা রাত থাইকা সহাল বেলায় আইসা আমি আবিষ্কার করলাম। । পাড়া পড়শি আইল..........
রাতুল :- চুপ হয়ে গেল লোকটা , এতে বুঝা যায় সে সত্যি এখনও বউ কে ভালোবাসেন। আবার নেগেটিভ যুক্তি ধরলে ও ধরা যায় । আসলে মানুষ কে বাহির থেকে পরখ করা কঠিন। বিচিত্র পৃথিবীর কতক কত চিত্র। তবে যে মানুষ টা সব থেকে বেশি ভালোবাসতে পারে তার ভালো’বাসার মানুষ টা কে । সেই মানুষ টা যদি আঘাত পায় তবে তা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না ।
Comments