হীরের সন্ধানে
হীরের সন্ধানে
অনেক দিন আগের কথা । আফ্রিকার এক কৃষক ছিল, নাম ছিল হাফিজ আলী । যার খর স্রোতা নদীর তীরে বিশাল খামার বাড়ি ছিল।
ফসল ফল-ফলাদি কোন কিছুর অভাব ছিল না। সুখে শান্তিতে দিন কাঁটছিল তার। এক দিন এক জহুরি, তার কাছে ছাগলের দুধ কিনতে এসে গল্পের ফাঁকে হীরের মহিমার কথা বললেন। হীরা যে কত দামি জিনিস তা বলতে গিয়ে জহরি বলল, যদি তোমার কাছে বুড়ো আঙুলের মতন এক খন্ড হীরা থাকে । তবে তুমি একটা শহরের মালিক হতে পারবে ।
যদি তোমার হাতের মুঠির আকারে এক খন্ড হীরা থাকে ।
তবে তুমি একটা দেশের মালিক হতে পারবে ।
জহরি চলে যাওয়ার পরে কৃষক হাফিজ আলী চিন্তায় পড়ে গেল । সে কি করে হীরের মালিক হবে । এই চিন্তায় সে রাত্রে ঘুমাতে পারল না। তার মনে কোন শান্তি নেই, খাওয়া, বিশ্রাম সব পালিয়ে গেল হাফিজ আলীর জীবনে । শুধু তার একটা স্বপ্ন, সে কি করে হীরের মালিক হবে।
এই হীরের আশায় তার সব সুখ আজ মাটি।
সে ঠিক করল তার খামার, বাড়ি সব বিক্রি করে , হীরের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়বে।তার বউ তাকে এই মিথ্যে মরিচিকার পিছনে ছুটতে বারণ করল। বলল, আমরা এমনিতেই অনেক ভালো সুখে শান্তিতে বসবাস করছি।আমাদের কোন কিছুর অভাব নাই। আপনি হীরার চিন্তা ভুলে যান ।কিন্তু কৃষক তার খামার বাড়িটি বিক্রি করে দিল। তার পর তার স্ত্রী সন্তানদের একটা নিরাপদ স্থানে রেখে, খামার বাড়ি বিক্রির সব টাকা নিয়ে হীরার সন্ধানে ছুটল।সমস্ত আফ্রিকা মহাদেশ চষে বেড়াল, কোথাও এক টুকরো হীরা পেল না। তারপর সারা ইউরোপ জুড়ে হীরা খুঁজে বেড়াল । কিন্তু হীরার সন্ধান পেল না।
সে যখন স্পেনে পৌঁছাল , তখন তার সমস্ত টাকা ফুরিয়ে গেল।চরম হতশা এসে বিধ্বস্ত করে দিল তার মন কে । সে ডানা ভাঙ্গা পাখির মতন নিরুপাই হয়ে গেল। দুঃখ্য ভারাক্রান্ত মনে একদিন সে বার্সিলোনা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করল।
এই দিকে যে লোকটি খামার বাড়িটি কিনে ছিল। সে এক দিন সকালে তার জমির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খর স্রোতা নদীতে গরু - মহিষ গুলো কে জল খাওয়াতে গিয়ে হঠাৎ একটা পাথর থেকে রংধনুর মতন ঝকমক আলো এসে চোখে পড়ল। পাথরটি বসার ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য কুঁড়িয়ে আনল।
প্রতিদিনের মতন সে দিন বিকেলে জহুরি দুধ কিনতে এসে বসার ঘরে পাথরটা দেখে চর্মকে উঠল।
সে আজিজ কে জিজ্ঞেস করল , হাফিজ কি ফিরে এসেছে ?
আজিজ বলল, না সে ফিরে আসেনি ।
জহুরি জিজ্ঞাসা করল , তাহলে এই হীরা পেলে কোথা থেকে ? আজিজ বলল, হীরে-টিরে আমি চিনি না।
তবে আমার জমিতে যে খর স্রোতা নদী বয়ে গেছে । তার তীরে কুঁড়িয়ে পেয়েছি । আরও অনেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। জহুরি বলল, না ! এ পাথর না হীরা।
আজিজ জহুরি কে যেখান থেকে পাথর টা কুঁড়িয়ে এনে ছিল। সেই জায়গাতে নিয়ে গেল।
জহুরি তো অবাক , যত দুর দেখা যাচ্ছিল নদীর তীর জুড়ে শুধুই হীরে ছড়ানো রয়েছে। জহুরি ছমছল চোখে হাটু গেড়ে বসে পড়ল । ভাবল মানুষ কাছের জিনিস কে কখনও মূল্যায়ন করে না । ছুটে চলে অচিন সুখের সন্ধানে।
সংকলনে :
শিশির আহাম্মেদ খান
শিশির আহাম্মেদ খান
Comments